হজ্জ্ব পালনের আহ্কাম (নিয়মাবলী)
হজ্জের আহ্কাম তিন প্রকার ঃ ফরয, ওয়াজিব এবং সুন্নাত।
ফরয ঃ
হজ্জের ফরয তিনটি ঃ
১) ইহ্রাম বাঁধা অর্থাৎ মনে মনে হজ্জের নিয়্যত করে তালবিয়া পাঠ করা।
২) আরাফাতের ময়দানে অবস্থান করা অর্থাৎ ৯ই যিলহজ্জ দ্বিপ্রহর থেকে ১০ই যিলহজ্জের সুবেহ্ সাদেকের পূর্ব পর্যন্ত যে কোন সময় এক মুহূর্তের জন্য হলেও আরাফাতের ময়দানে অবস্থান করা।
৩) তাওয়াফে যিয়ারত করা অর্থাৎ ১০ই যিলহজ্জের ভোর থেকে ১২ই যিলহজ্জ সূর্যাস্তের পূর্ব পর্যন্ত বায়তুল্লাহ শরীফ তাওয়াফ করা।
ওয়াজিব ঃ
(১) নির্দিষ্ট জায়গা থেকে ইহরাম বাঁধা (২) সায়ী অর্থাৎ সাফা ও মারওয়ার মধ্যে দৌড়ানো (৩) সাফা থেকে সায়ী শুরু করা (৪) তাওয়াফের অধিকাংশ চক্কর আদায় করে এরপর সায়ী করা (৫) সূর্যাস্তের পূর্বে ওকূফে আরাফা করা (৬) মুযদালিফায় ওকূফ করা (৭) মাগরিব এবং এশার নামায মুযদালিফায় এসে এশার সময় পড়া (৮) দশ তারিখ শুধু জামরাতুল আকাবায় এবং ১১ ও ১২ তারিখে তিন জামরার সবখানেই ’রামি’ বা কংকর নিক্ষেপ করা (৯) জামরাতুল আকাবার ’রামি’ বা কংকর নিক্ষেপ দশ তারিখে হালক অর্থাৎ মস্তক মু-নের আগে করা (১০) কুরবানীর পর মাথা কামান কিংবা চুল ছাঁটা (১১) কিরান এবং তামাত্তু হজ্জ পালনকারীর জন্য কুরবানী করা (১২) তাওয়াফ হাতীমের বাহির দিয়ে করা (১৩) তাওয়াফ ডান দিক থেকে করা (১৪) কঠিন অসুবিধা না থাকলে পায়ে হেঁটে তাওয়াফ করা (১৫) ওযূর সংগে তাওয়াফ করা (১৬) তাওয়াফের পর দু’রাকাআত নামায পড়া (১৭) তাওয়াফের সময় সতর ঢাকা থাকা (১৮) কংকর নিক্ষেপ করা ও কুরবানী করা, মাথা মু-ন এবং তাওয়াফ করার মধ্যে তারবীয় বা ক্রম বজায় রাখা (১৯) মীকাতের বাইরে অবস্থানকারীদের বিদায়ী তাওয়াফ করা (২০) ইহরামের নিষিদ্ধ কাজগুলো না করা।
সুন্নাত ঃ
(১) মীকাতের বাইরে থেকে আগমনকারীদের জন্য তাওয়াফে কুদূম করা (২) তাওয়াফ হাজরে আসওয়াদ থেকে শুরু করা (৩) তাওয়াফে কুদূম কিংবা তাওয়াফে যিয়ারতে রমল করা (৪) সাফা ও মারওয়ার মধ্যে যে দু’টো সবুজ স্তম্ব আছে তার মধ্যবর্তী স্থান দৌড়ে অতিক্রম করা; তবে তা মহিলাদের জন্য প্রযোজ্য নয় (৫) মক্কায় ৭ তারিখে, আরাফাতে ৯ তারিখে এবং মিনায় ১১ তারিখে ইমামের খুত্বা শোনা (৬) ৮ তারিখে ফজরের পর মক্কা মুয়ায্যমা থেকে রওয়ানা হওয়া যেন পাঁচ ওয়াক্ত নামায পড়া যায় (৭) ৯ তারিখের রাত মিনায় কাটানো (৮) সূর্যোদয়ের পর মিনা থেকে আরাফাত রওয়ানা হওয়া (৯) ওকূফে আরাফার জন্য গোগল করা (১০) আরাফাত থেকে ফেরার সময় মুযদালিফায় রাতে অবস্থান করা (১১) সূর্যোদয়ের কিছুক্ষণ পূর্বে মুযদালিফা থেকে মিনার রওয়ানা হওয়া (১২) দশ এবং এগারো তারিখের রাত মিনায় কাটানো এবং ১৩ তারিখেও মিনায় থাকলে ১২ তারিখ দিবাগত রাতও সেখানে কাটানো।
হজ্জের মধ্যে নিষিদ্ধ কাজসমূহ ঃ
ইহ্রাম বাঁধার পর যে সমস্ত কাজ নিষিদ্ধ উল্লেখ করা হয়েছে সে সকল কাজ হজ্জের সময়ও নিষিদ্ধ।
হজ্জ ফাসেদ হওয়ার কারণসমূহ এবং এর কাফ্ফারা ঃ
কেউ যদি হজ্জের কোন রুকন ত্যাগ করেন তবে তাকে পুনরায় হজ্জ করতে হবে।
কংকর ছোঁড়া পরিত্যাগ করলে ‘দম’ (কুরবানীর মাধ্যমে) কাফ্ফারা দিতে হয়।
হজ্জের যে কাজগুলো তারতীব বা ক্রমানুসারে করতে হয় সেগুলো তারতীব অনুসারে না করলে ‘দম’ দিতে হয়।
সূর্যাস্তের পূর্বে আরাফা থেকে বের হলে ‘দম’ দিতে হবে। ওযর ব্যতীত মুযদালিফায় ওকুফ বা অবস্থান না করলে ‘দম’ দিতে হয়।
যৌন কামনাসহ চুমু খেলে কিংবা আলিঙ্গন করলে ‘দম’ দিতে হবে।
মাথা মু-ালে বা চুল ছাঁটলে ‘দম’ দিতে হবে।
একটি উকুন বা পোকা মারলে একটি রুটির টুক্রা, তিনটি পর্যন্ত মারলে এক মুঠো গম আর এর বেশী মারলে সদকা করতে হবে।
ওযর ব্যতীত সুগন্ধি ব্যবহার করলে ‘দম’ অর্থাৎ কুরবানী দিতে হবে। ওযরবশতঃ ব্যবহার করলে কুরবানী বা তিনটি রোযা বা ছয়জন মিস্কিনকে সদকা ফিত্রের পরিমান অর্থাৎ পৌনে দু’সের (১ কেজি ৬৫০ গ্রাম) গম বা তার মূল্য প্রদান – এই তিনটির যে কোন একটি করতে হবে।
সেলাই করা কাপড় যদি রাতসহ পুরো একদিন পরনে থাকে তবে ‘দম’ আর এর কম পরিমাণ হলে সদকা অর্থাৎ পৌনে দু’সের (১ কেজি ৬৫০ গ্রাম) গম বা তার মূল্য আদায় করতে হবে।
পায়ের মধ্যবর্তী উঁচু হাঁড় ঢেকে যায় এমন জুতো রাতসহ একদিন পরে থাকলে তবে ‘দম’ আর এর কম হলে সদকা আদায় করতে হবে।
পুরো একদিন ও রাত মাথা বা চেহারা ঢেকে রাখলে ‘দম’ আর এর কম হলে সদকা দিতে হবে।
বিশেষ দ্রষ্টব্য ঃ ‘দম’ থেকে নিজে আহার করতে পারবে না, গরীবদের জন্য সদকা করে দিতে হবে। এসব ক্ষেত্রে কিরান হজ্জকারীর জন্য দ্বিগুণ ‘দম’ দিতে হবে।
বিশেষ দ্রষ্টব্য ঃ জীবনে অনেকের নামায ও রোযা কাযা হয়। প্রত্যেক হাজীর মক্কা শরীফে অবস্থানকালে বায়তুল্লাহ্ শরীফে এক ওয়াক্ত নামায কবুল হলে এক লক্ষ ওয়াক্ত নামাযের ফযীলত পাওয়া যায়।