হজ্জ্ব পরিচিতি ও ইতিহাস
হজ্ব ও ওমরার আহকাম
হজ্বের পরিচয় : হজ্ব () আরবী শব্দ। এর আভিধানিক অর্থ হচ্ছে ইচ্ছা করা বা সংকল্প করা। ইসলামী শরীআতের পরিভাষায় মহান আল্লাহকে সন্তুষ্ট করার উদ্দেশ্যে নির্দিষ্ট সময়ে নির্দিষ্ট নিয়মে নির্দিষ্টস্থান তথা কাবা শরীফ ও সংশ্লিষ্ট স্থান সমূহ যিয়ারত করার নাম হজ্ব।
হজ্বের হুকুমত গুরুত্ব :
ইসলামের পঞ্চ স্তম্ভের মধ্যে হজ্জ হচ্ছে পঞ্চম। সামর্থবানদের উপর জীবনে একবার হজ্ব করা ফরয। এটা হচ্ছে আর্থিক ও দৈহিক ইবাদত। তাই সুনির্দিষ্ট শর্তসমূহ পূরণ হলেই হজ্ব ফরয হয়। এ ফরযকে অস্বীকার করা কুফরী। তাই কোন মুসলমান এ ফরযকে অস্বীকার করলে মুরতাদ (ধর্মত্যাগী) হয়ে যায়। ফরয মেনে নিয়ে আদায় না করলে সে ফাসিক।
যে বছর হজ্ব ফরয হয় ঐ বছরেই তা আদায় করা ফরয। ওযর ছাড়া বিলম্ব করলে গুনাহগার হবে। তাই বিনা ওযরে বিলম্ব করা জায়িয নয়। তবে জীবদ্দশায় আদায় করতে পারলে ফরয আদায় হয়ে যাবে। আদায় না করে মারা গেলে তার যিম্মায় হজ্ব বাকী থেকে যাবে। হজ্ব ফরয হওয়ার পর সে কায়িকভাবে অক্ষম হয়ে পড়লে অন্য কারো দ্বারা হজ্ব করানো ফরয যাকে বদলী হজ্ব বলা হয়। এভাবেও আদায় না হলে অন্য কারো দ্বারা হজ্ব আদায় করানোর অসিয়ত করে যাবে। মৃত্যুর পূর্বে এভাবে অসিয়ত করে যাওয়ার তার উপর ফরয। এভাবে অসিয়ত না করলে সে গুনাহগার হবে। হজ্ব ফরয হওয়ার পর যদি আদায় করার সময় পাওয়া না যায় অথবা হজ্বের পথে মারা যায় তাহলে তার উপর আর ফরয থাকবে না। সে ফরয মাফ হয়ে যাবে।
হজ্ব আখিরাতের স্তর সমূহের বাস্তব নমূনা। হজ্ব আখিরাতের একটি বাস্তব চিত্র যেন আমাদের সামনে উপস্থাপন করে। আত্মীয় স্বজন থেকে বিদায় নিয়ে হজ্বের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হওয়া যেন মৃত্যুর সময় আপনজনসহ সবকিছু ছেড়ে চলে যাওয়ার মত। যানবাহনে আরোহন করার মাধ্যমে হাজীকে মায়্যিতের খাটিয়র উপর সওয়ার হওয়াকে স্মরণ করিয়ে দেয়। ইহরামের দু’টুকরা সাদা কাপড় যেন মায়্যিতের কাপনের কাপড়। কা’বা শরীফের চতুর্দিকে প্রদক্ষিণ করা হাশরের দিন আরশে আজীমের চতুর্দিকে প্রদক্ষিণ করার কথা স্মরণ করিয়ে দেয়। সাফা ও মারওয়ার মাঝে দৌড়াদৌড়ি হাশরের ময়দানে এদিক ওদিক ছুটাছুটি করার মত। ৯ই যিলহজ্ব আরাফাতের ময়দানে লক্ষ লক্ষ হাজীর অবস্থান হাশরের ময়দানে সকল মানুষের অবস্থানের সাথে তুলনীয়। এভাবে হাজীগণের সামনে আখিরাত ভ্রমণের একটি চিত্র ভেসে উঠে।
হজ্ব হচ্ছে মহান আল্লাহর প্রতি গভীর ভালবাসা প্রকাশ করার এক অপরূপ দৃশ্য। হজ্ব সারা বিশ্বে ছড়িয়ে থাকা লক্ষ লক্ষ মুসলিমের পরস্পরের সাক্ষাতের মাধ্যমে উদ্দীপ্ত হবার ঠিকানা। হজ্ব মুসলিমগণের সর্ববৃহৎ বিশ্বে সম্মেলন। বিশ্বের আলিম ও ফকীহবৃন্দ একত্রিত হয়ে সম্মিলিত ভাবে বিভিন্ন বিষয়ে উদ্ভূত সমস্যা সমূহের সমাধান দেওয়ার সুযোগ পান এ হজ্বে। হজ্ব হলো মুসলিম উম্মাহর এক বৃহত্তম প্রদর্শনী। এর মাধ্যমে মুসলিম উম্মাহর অনৈক্য দূর হয়ে যায় এবং এর প্রভাব ও গৌরব চতুর্দিকে ছড়িয়ে পড়ে।
হজ্ব ফরয হওয়ার শর্তাবলী :
নি¤েœাক্ত শর্তসমূহ একত্রিত হলেই হজ্ব ফরয হয় :
১. মুসলমান হওয়া, ২. জ্ঞানবান হওয়া, ৩. বালিগ তথা প্রাপ্ত বয়স্ক হওয়া, ৪. স্বাধীন হওয়া (গোলাম না হওয়া), ৫. আর্থিক দিক থেকে হজ্ব পালনের সক্ষমতা অর্জন করা, ৬. হজ্ব ফরয হওয়ার ইলম বা জ্ঞান থাকা ৭. হজ্বের সময় হওয়া।
হজ্ব আদায় ওয়াজিব হওয়ার শর্তাবলী :
নি¤েœর শর্তসমূহ পাওয়া গেলে হজ্ব আদায় করা ওয়াজিব হয়
১. শারীরিক সুস্থতা, ২. রাস্তাঘাট নিরাপদ হওয়া, ৩. কারাবন্দী না হওয়া, ৪. হজ্ব আদায়কারী মহিলা হলে তার সাথে স্বামী বা অন্য কোন মাহরাম আত্মীয় থাকা, ৫. মহিলাদের জন্য ইদ্দত
হজ্বের ফরয সমূহ :
হজ্বের ফরয তিনটি। তা নি¤œরূপ :
১. ইহরাম বাঁধা : ইহরাম আরবী শব্দ। এর আভিধানিক অর্থ হচ্ছে হারাম করা বা নিষিদ্ধ করা। হজ্ব ও ওমরা পালনেচ্ছু ব্যক্তি যখন ইহরাম বেঁধে হজ্ব অথবা ওমরা আদায় করার নিয়্যতে তালবিয়া পাঠ করেন তখন তাদের উপর কতিপয় হালাল এবং মুবাহ কাজ ও হারাম হয়ে যাওয়ার কারণে একে বলা হয় ইহরাম। আবার ইহরাম অবস্থায় পুরুষের জন্য ব্যবহৃত চাদর দু’টিকেও ইহরাম বলা হয়। হজ্ব অথবা ওমরার নিয়্যত করে কমপক্ষে একবার তালবিয়া পাঠ করলে ইহরাম বাঁধা গণ্য হয়।
২. উকূফে আরাফা বা আরাফাতের ময়দানে অবস্থান করা :
জিলহজ্ব মাসের নবম তারিখ সূর্য হেলে যাওয়ার পর থেকে ১০ই জিলহজ্বের সুবহে সাদিকের পূর্ব পর্যন্ত যে কোন সময়ে এ তাওয়াফ আদায় করতে হ। ১০ই জিলহজ্ব জামরায় কংকর নিক্ষেপ করে এবং প্রয়োজনে কুরবানী আদায় করে মাথার চুল ছাঁটা বা মাথা মুন্ডানোর পর থেকে এ তাওয়াফ শুরু হয়। উপরোক্ত ফরয তিনটির মধ্যে প্রথমটি অর্থাৎ ইহরাম বাঁধা হজ্বের শর্ত। পরবর্তী দু’টি অর্থাৎ উকূফে আরাফাই সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ রুকন। উপরোক্ত ফরয তিনটির কোন একটি বাদ পড়লে হজ্ব হবে না। দম বা কুরবানী দিলেও হজ্ব আদায় হবে না।
হজ্বের ওয়াজিব সমূহ :
১. মুযদালিফায় অবস্থান করা, ৯ই জিলহজ্ব দিবাগত রাত্রে সুবহে সাদিক থেকে সূর্যোদয় পর্যন্ত সময়ের মধ্যে ক্ষণিকের জন্য হলেও মুযদালিফায় অবস্থান করা ওয়াজিব।
২. সাফা-মারওয়ায় সায়ী করা,
৩. রমী করা, (জামরা সমূহে কংকর নিক্ষেপ করা),
৪. হজ্বে তামাত্তু ও হজ্বে কিরান আদায়কারী হলে কুরবানী করা, (এর অপর নাম দমে শুকরিয়া)
৫. মাথার চুল মুন্ডানো অথবা ছোট করা,
৬. মীকাতের বাইরের হাজীগণের বিদায়ী তাওয়াফ করা,
হজ্বের সুন্নাত সমূহ :
১. মীকাতের বাইরে অবস্থানকারীদের মধ্যে যারা হজ্বে ইফরাদ অথবা হজ্বে কিরান করেন তাদের জন্য তাওয়াফে কুদূম করা। তাওয়াফে কুদূমে রমল করা। এই তাওয়াফে রমল না হলে তাওয়াফে যিয়ারত অথবা বিদায়ী তাওয়াফে রমল করা।
২. সাফা ও মারওয়ার মধ্যে যে দু’টো সবুজ বাতির স্তম্ভ আছে এর মধ্যবর্তী স্থান দ্রুতগতিতে চলা, তবে তা মহিলাদের জন্য প্রযোজ্য নয়।
৩. মক্কা মুকাররমায় ৭ই জিলহজ্ব, ৯ই জিলহজ্ব আরাফাত ও মিনায় ১১ই জিলহজ্ব ইমামের
৪. ৯ই জিলহজ্ব সূর্যোদয়ের প মিনা থেকে আরাফারে উদ্দেশ্যে রওয়ানা করা।
৫. উকুফে আরাফার জন্য গোসল করা।
৬. আরাফাত থেকে ফেরার পথে মুযদালিফায় রাত্রে অবস্থান করা।
৭. ১০ই জিলহজ্ব সূর্যোদয়ের সামান্য পূর্বে মুযদালিফা থেকে মিনার দিকে রওয়ানা হওয়া।
৮. কুরবানীর দিনগুলির রাত্রে মিনায় অবস্থান করা।
৯. তিন জামরাতে কংকর নিক্ষেপের সময় তারতীব ধারাবাহিকতা রক্ষা করা সুন্নাত বাদ পড়লে দম ওয়াজিব হয় না।
হজ্বের আদাব ও মুস্তাহাব সমূহ
১. ইস্তিখারা করা (সুনির্দিষ্ট অনুযায়ী)।
২. হজ্বের সফরে অভিজ্ঞতা আছে এমন লোকের সাথে পরামর্শ করা।
৩. সমুদয় কজ পরিশোধ করা।
৪. খালিস নিয়্যতে ও শর্তাবলী পূরণ করে আল্লাহর নিকট তাওবা করা।
৫. কেবল মহান মহান আল্লাহর সন্তুষ্টির কামনার মনোভাব রাখা। অহমিকতা, প্রদর্শনেচ্ছা ও খ্যাতি অর্জনের মনোভাব থেকে নিজেকে মুক্ত রাখা।
৬. হালাল উপার্জন দ্বারা হজ্ব করা। অবৈধভাবে উপার্জিত অর্থ খরচ করে হজ্ব করলে তা আল্লাহর নিকট কবুল হয় না।
৭. নিষ্ঠাবান ও নেককার আলেমে দ্বীনকে সদরসঙ্গী হিসেবে গ্রহণ করা। অর্থাৎ আলেমে দ্বীনের সাথে থেকে হজ্বের কার্যাবলী আদায় করা। ভাল মানের আলেম পাওয়া না গেলে অভিজাতসম্পন্ন ফরহেজগার ব্যক্তির সঙ্গে থাকা।
৮. পরিবারের যাবতীয় খরচের টাকা পয়সা দিয়ে যাওয়া।
৯. হজ্বের সফরে ব্যবসা বাণিজ্যের উদ্দেশ্য না রাখা।
১০. কোন ব্যক্তির আমানত থাকলে বা ধাবাকৃত বস্তু থাকলে তা ফেরত দেয়া।
১১. সফরের পূর্বে পরিবারের লোকজন, আত্মীয়-স্বজন এবং ….. বন্ধুদের কাছ থেকে বিদায় গ্রহণ করা। তাঁদের সাথে সাক্ষাৎ করে ক্ষমা চাওয়া ও দোয়া কামনা করা। আত্মীয়দের হক আদায় করা।
১২. হজ্বের সফরের পূর্বেই হজ্ব সংক্রান্ত মাসআলা মাসাইয়েল শিখে নেয়া ও চর্চার জন্য কিতাব-পত্র সাথে রাখা।
১৩. বাড়ী থেকে বের হওয়ার আগে দু’রাকাত নামায আদায় করা এবং সফরের দু‘আ পাঠ করা। বাড়ীতে ফেরার পরও দু’ রাকাত নামায আদায় করা এবং সফরের দুআ পাঠ করা। বাড়ীতে ফেরার পরও দু’রাকাত নফল আদায় করা।
১৪. হজ্বের সফরে কারো হাদীয়া তোহফার প্রতি লালায়িত না হওয়া। ছোট খাত নিজের খরচ নিজে বহন করা।
১৫. বেশী বেশী নফল ইবাদত ও আল্লাহর যিকিরে মগ্ন থাকা। কুরআন তিলাওয়াত সহীহ চেষ্টা করা।
হজ্বের প্রকারভেদ :
হজ্ব তিন প্রকার, যথা ১। ইফরাদ ২। কিরান ও ৩। তামাত্তু।
ইফরাদ হজ্ব :
মীকাত থেকে কেবল মাত্র হজ্ব ইহরাম বেঁধে হজ্ব করাকে ‘ইফরাদ হজ্ব বলা হয়। এ ইহরামের মাধ্যমে ওমরা আদায় করা হয় না।
কিরান হজ্ব :
কিরান শব্দের অর্থ হচ্ছে, মিলিত করা, যুক্ত করা বা একত্রিত করা। একই সঙ্গে মীকাত থেকে হজ্ব ও ওমরার ইহরাম বেঁধে হজ্ব করাকে ‘কিরান হজ্বও বলে। অর্থাৎ একই ইহরামে প্রথমে ওমরা করা অত:পর হজ্ব আদায় করা।
তামাত্তু হজ্ব :
তামাত্তু শব্দের অর্থ হচ্ছে উপভোগ করা, উপকৃত হওয়া বা ফায়দা হাসিল করা। হজ্বের সফরে মীকাত ইহরাম বেঁধে এবং ওমরার কাজ সম্পন্ন করার পর পুনরায় সে সফরেই ৮ জিলহজ্ব মক্কা থেকে হজ্বের ইহরাম বেঁধে হজ্ব করাকে তামাত্তু বলা হয়। এখানে ওমরা আদায় করার পর ইহরাম খুলে স্বাভাবিক পোষাক পরা হয়।
‘মীকাত’ শব্দটির আরবী। এর আভিধানিক অর্থ হলো নির্দিষ্ট সময় বা স্থান। পবিত্র কাবা সংশ্লিষ্ট হরম সীমানায় প্রবেশে ইচ্ছুক ব্যক্তিদের জন্য ইহরাম ছাড়া যে স্থান অতিক্রম করা জায়িয নয় শরীআতের পরিভাষায় সে স্থানকে বলা হয় মীকাত।
মীকাত তিন প্রকার :
১. আফাকী লোকদের মীকাত :
অর্থাৎ যারা দূরবর্তী লোকদের মীকাত সমূহের বাহিরের সীমানায় সারা বিশ্বের যে কোন স্থানে অবস্থান করেন।
২. হিল্লী লোকদের মীকাত, (যারা হরমের চৌহদ্দীর বাইরে হিল্ল এলাকায় বসবাস করেন)
৩. হরমী লোকদের মীকাত, (যারা হরম সীমানার ভিতরে অবস্থান করেন।
যারা আফাকীদের মীকাত সমূহের ভিতরে অথচ হরম এলাকার বাইরে বসবাস করেন তাদের মীকাত হচ্ছে সমগ্র হিল্ল এলাকা। তারা হজ্ব ও ওমরার জন্য হিল্ল এর যে কোন স্থান থেকে ইহরাম বাঁধবেন।
যারা হরম এলাকার ভিতরে বসবাস তাদের হজ্বের ইহরামের মীকাত হচ্ছে সমগ্র হরম এলাকা এবং ওমরার ইহরামের মীকাত হচ্ছে সমগ্র হিল্ল এলাকা। অর্থাৎ ওমরার জন্য হরম এলাকার বাইরে যে কোন হিল্ল এলাকায় গিয়ে ইহরাম বাঁধতে হবে।
আফাকী লোকদের মীকাত :
১. যুলহুলায়ফা বা বীরে আলী : এ স্থানটি মদীনাবাসী এবং এ পথে মক্কা মুআজ্জমায় আগমনকারী লোকদের মীকাত।
২. যাত্-ইরক : এ স্থানটি ইরাকবাসী ও এ পথে মক্কায় আগমনকারী লোকদের মীকাত।
৩. জুহফা : এ স্থানটি সিরিয়াবাসী এবং এ পথে মক্কায় আগমনকারীদের মীকাত।
৪. র্কন বা র্কনুল মানাযিল : এ স্থানটি নজদবাসী এবং এ পথে মক্কায় আগমনকারী দের মীকাত।
৫. ইয়ালামলাম : এ স্থানটি ইয়ামনবাসী, বাংলাদেশ, পাকিস্তান, ভারত সহ যারা এ পথে হজ্ব করতে যায়, তাদের মীকাত।
ইহরাম
ইহরাম হচ্ছে হজ্বের তিন ফরযের অন্যতম যা পূর্বে আলোচিত হয়েছে। হজ্ব ও ওমরা উভয়ের জন্য ইহরাম আবশ্যক। ইহরাম বাঁধার নিয়ম নি¤েœ পেশ করা হল :
পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার প্রয়োজনীয় সকল কাজ সম্পন্ন করে গোসল করতে না পারলে উযু করে নিলে হয়। এর পর পুরুষগণ সেলাই করা কাপড় পরিবর্তন করে নিবেন। একখানা সেলাইবিহীন চাদর পরিধান করে। আর একখানা চাদর গায়ে দিবেন। কাপড় সাদা হওয়া মুস্তাহাব। এরপর ইহরামের নিয়্যতে দু’রাকাআত নফল নামায আদায় করবেন। প্রথম রাকাআতে সূরা ফাতিহার পর সূরা কাফিরূন এবং দ্বিতীয় রাকাতে সূরা ফাতিহার পর সূরা ইখলাস পাঠ করা উত্তম। অন্য সূরা পাঠ করলেও হয়। এ নামায নিষিদ্ধ ও মাকরূহ ওয়াক্তে যাতে আদায় করা না হয়। সালাম ফেরানোর পর মাথা উন্মুক্ত করে কিবলামূখী হয়ে বসে বসেই হজ্ব বা ওমরার নিয়্যত করবেন।
হজ্বের ইহরাম হলে নিম্নরূপ নিয়্যত করা যায়
অর্থ : হে আল্লাহ! আমি ওমরা আদায়ের নিয়্যত করছি। এ কাজ আমার জন্য সহজ করুন এবং কবুল করুন।
উল্লেখ্য, আরবী ভাষায় নিয্যত করা জরুরী নয়। বাংলা ভাষায় করলেও নিয়্যত হয়। নিয়্যত করার সাথে সাথে উচ্চ স্বরে তিনবার তালবিয়া পাঠ করবেন। তালবিয়া নিম্নরূপ :
উচ্চারণ : লাব্বাইকা আল্লাহুম্মা লাব্বাইক, লাব্বাইকা লা শারীকা লাকা লাব্বাইক, ইন্নাল হামদা ওয়ান্ নি’মাতা লাকা ওয়াল মুল্ক, লা-শারীকা লাকা
অর্থ : আমি উপস্থিত হে আল্লাহ! আমি উপস্থিত, আমি উপস্থিত। তোমার কোন অংশীদার নেই আমি উপস্থিত। নিশ্চয়ই সকল প্রশংসা ও নিয়ামত তোমার এবং রাজত্ব ও তোমারই। তোমার কোন অংশীদার নেই।
পুরুষদের জন্য উচ্চস্বরে একবার তালবিয়া পাঠ করা ফরয। একাধিকবার পাঠ করা সুন্নাত। তিনবার পাঠ করা উত্তম। তালবিয়ার বিশেষ শব্দসমূহ যা পূর্বে উল্লেখ করা হয়েছে তা উচ্চারণ করা সুন্নাত। অর্থাৎ উক্ত শব্দগুলো হুবহু উচ্চারণ করা ফরয নয়। উক্ত শব্দসমূহের স্থলভিষিক্ত অন্য কোন যিকর এর মাধ্যমেও তালবিয়ার ফারযিয়াত আদায় হয়। মনে রাখতে হবে, যে কোন ভাষায় উচ্চারণ করে হোক বা মনে মনে ইহরামের নিয়্যত করা আবশ্যক।